তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশ হিসেবেই বাংলাদেশ সবার কাছে পরিচিত। এদেশে নিবিত্ত সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বেশি। এদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য বিশেষ করে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলন গতি পেয়েছে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এ আন্দোলন সফলতার মুখ দেখা যায়না ।
বাস্তবক্ষেত্রে এদেশে সমবায় আন্দোলনে যে সমস্যা লক্ষনীয় তা নিম্নে তুলে ধরা হলো—
১. সঠিক পরিকল্পনার অভাব (Lack of proper planning): বাংলাদেশে সমবায় সমিতির উন্নয়নে কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। ফলে এদের অস্তিত্ব হয় স্বল্পমেয়াদি এবং বিকাশ হয় বাধাপ্রাপ্ত ।
২. প্রশিক্ষণের অভাব (Lack of training): সমবায়ের নির্বাহীগণের কোনোরূপ প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ নেই বলে তারা অনেক সময় ভুল পথে পরিচালিত হয়।
৩. আমলাতান্ত্রিক মনোভাব (Bureaucratic attitude): এদেশে কেউ কোনো দ্বায়িত্ব ও ক্ষমতা পেলেই নিজেকে একজন অসাধারণ ব্যক্তি ভাবতে শুরু করেন। আর সমবায় সমিতি পরিচালনার জন্যে নিযুক্ত ব্যক্তিরাও আমলাতন্ত্রিক মনোভাব ধারণ করায় তারা সদস্যদের সেবার বদলে অনেক সময় অসুবিধা সৃষ্টি করেন। ফলে সমবায় সমিতি ভেঙ্গে যায়।
৪. স্বজন-প্রীতি (Nepotism): সমিতির পরিচালকদের স্বজন-প্রীতি বাংলাদেশের সমবায়গুলোর বিকাশের পথে অন্তরায় । বিশেষ করে ঋণদান সমবায় সমিতিগুলোর ঋণদানের ক্ষেত্রে এ সমস্যা দেখা দেয় বেশি ।
৫. শিক্ষার অভাব (Lack of education): বাংলাদেশে অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যাই অধিক। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা সচেতনতা না থাকায় তারা সমবায় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে। এতে সমবায় প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য ।
৬. অসম প্রতিযোগিতা (Un-equal competition): ক্ষুদ্রায়তন প্রকৃতির সংগঠন হওয়ায় সমিতিকে মধ্যম ও বৃহদায়তন সংগঠনের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
৭. সততা ও নিষ্ঠার অভাব (Lack of honesty and sincerity): সমবায়ের মতো যৌথ প্রচেষ্টার সফলতা অনেকটাই সততা ও নিষ্ঠার উপর নির্ভরশীল। আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে এ দুটোরই বিসর্জন দিতে বসেছে। ফলে সমবায় সমিতির উদ্দেশ্যও আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।
৮. মূলধনের স্বল্পতা (Defeciency of Capital) : সমবায় দরিদ্রদের সংগঠন। তাদের প্রদত্ত স্বল্প পরিমাণ চাঁদা সমিতির জন্য পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় মূলধন সৃষ্টি করে না ।
৯. সরকারের সহযোগিতা (Co-operation of govt): সমবায়ের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়ন করা সম্ভব । কিন্তু বাস্তবতা হলো সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এক্ষেত্রে কম ।
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সমবায় সমিতিকে এগিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা থাকলেও উপরিউক্ত সমস্যার কারণে তা যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করতে পারছে না। তাই এসব সমস্যা দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবারই মহানুভবতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন ।